| বঙ্গাব্দ
ad728
ad728

প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা ও বজ্রপাত প্রতিরোধে তাল গাছ গুরুত্বপূর্ণ

রিপোর্টারের নামঃ MD MUNZURUL ISLAM
  • আপডেট টাইম : 07-06-2025 ইং
  • 68096 বার পঠিত
প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা ও বজ্রপাত প্রতিরোধে তাল গাছ গুরুত্বপূর্ণ
ছবির ক্যাপশন: প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা ও বজ্রপাত প্রতিরোধে তাল গাছ গুরুত্বপূর্ণ

তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে, সব গাছ ছাড়িয়ে, উঁকি মারে আকাশে” কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর ‘তালগাছ’ শুধু কি এক পায়ে দাঁড়িয়ে, নাকি কবিতাটির এই অমর পক্তিমালা হতে অনুভব করি তাল গাছের প্রয়োজনীয়তা, অপরিহার্যতা, গুরুত্ব আর জীবন ঘনিষ্ঠতার বিষয়টি। তালগাছ আমাদের জনসমাজে প্রচলিত সাহিত্য, সংস্কৃতিতে, খাদ্যে কেবল বিশেষ স্থান দখল করেছে তা নয়, তাল বৃক্ষ সত্যিকার অর্থে জীবনের কথা বলে, বাঙালির ঐতিহ্যে জড়িয়ে আছে। প্রাকৃতিক দূর্যোগ মোকাবেলায় ‘বজ্র প্রতিরোধক’ (বৈদ্যুতিক আর্থিং) নামে খ্যাত গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য তালগাছ সচেতনতার অভাবে এখন বিলুপ্তির দিকে। পরিবেশ বান্ধব তাল গাছ প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা ও বজ্রপাত প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। গাছ উঁচু হওয়ায় বজ্রপাত সরাসরি এ গাছের মাধ্যমে মাটিতে চলে যায়। প্রতি বছর অত্যাধিক বজ্রপাতের ফলে মানুষের মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। বজ্রপাত শোষনকারী গাছ হিসেবে গুরুত্বপূর্ন তাই প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় তালগাছের বিকল্প নেই। গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য রক্ষা ও শোভাবর্ধনেও জুড়ি মেলা ভার। তাল গাছ প্রকৃতি সাজাই জীবন বাঁচাই। এমন পুষ্টি ও ঔষধি গুণাগুণের গাছ খুব কমই আছে। তাল গাছ লম্বায় ৩০ থেকে ১০০ ফুট পর্যন্ত উঁচু হয়। প্রায় ১৪০ থেকে ১৫০ বছর বয়স পর্যন্ত দীর্ঘজীবী হয়। তালগাছের বৃদ্ধি ধীর গতি সম্পন্ন। বীজ রোপনের ১০ থেকে ১৫ বছর বয়সে গাছে ফল ধরে। তাল গাছ দুই প্রকার হয় পুরুষ ও মেয়ে। মেয়ে তালগাছের চাইতে পুরুষ তালগাছের চাহিদা বেশি। তাল একটি গ্রীষ্মকালীন ফল, বিভিন্নভাবে খাওয়া যায়। তালের ফল, রস, বীজ ও শাঁস সবই সুস্বাধু খাদ্য। তাল গাছের মোচা থেকে রস সংগ্রহ করে গুড়, পাটালি, মিছরি, ভিনেগার, খির, পায়েস তৈরি করা হয়। কচি অবস্থায় বীজের ভিতরের অংশ হলো তাল শাঁস যা পুষ্টিতে ভরপুর ও খেতেও ভারি মজার। তাল শাঁসের মধ্যে থাকা পানি শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। পাকা তাল খেতে খুবই সুস্বাদু যা বাঙ্গালির ঐতিহ্যের সাথে জড়িত। তালের ঘন নির্যাস থেকে তাল ফুলোরি, তালের তৈরি রুটি, লুচি, বড়া, তালসত্বসহ বিভিন্ন পিঠাপুলি তৈরি করা হয়। পাকা তাল খাওয়ার পর আঁটি কিছুদিন রেখে দিলে তার ভেতর সাদা শাঁস হয়, তা কাঁচা ও তরকারি হিসেবে রান্না করে খাওয়া যায়। তালের কাঠ খুবই মজবুত হওয়ার কারণে ঘরের খুঁটি কিংবা আড়া দিয়ে তৈরি ঘরও শক্ত হয়। তালগাছের গোড়ালি দ্বারা বাড়িঘর, দোকানপাট, দোচালা খাড়া টিনের ঘর, ডিঙ্গি নৌকা, গরুর গাড়ির ধুরি তৈরিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও ব্রাশ, পাপোষ, ছোট বাষ্কেট, মাছ ধরার খলশান, তালের লম্বা জট পুড়িয়ে দাঁতের মাজন হয়, পাতা দিয়ে ঘরের ছাউনি, তাল পাতার পাটি, হাতপাখা, চাটাই, মাদুর, টুপি, ঝুড়ি, বাচ্চাদের বিভিন্ন প্রকারের খেলার পুতুল, হরেক রকমের সৌখিন সামগ্রী তৈরিসহ লাকরী (জালানি খড়ি) হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এর কোন অংশই ফেলতে হয় না। তালের ছোবড়া থেকে নেট জাল তৈরি করেছে নতুন এক সম্ভাবনা। তালগাছ শুধু একটা গাছই নয়, এর সাথে আমাদের সকলের সম্পর্ক মিথস্ক্রিয়া হয়, গাছ বৃক্ষ আমাদের পরিবারের মতো, এখানে পাখিরা যেমন বাসা বাধে খাবার সংগ্রহ করে তেমনি মানুষও এর থেকে উপকৃত হয়, সবই আমাদের জীবন ও সাংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। খরা প্রবণ বরেন্দ্র অঞ্চলে ভৌগোলিক কারনেই এখানে তাল খেজুরের গাছ বেশি হয়। কিন্তু খুবই দুঃখজনক যে আমাদের এসব গাছ কমে যাচ্ছে। বিদ্যুৎ এর লাইনের অজুহাতে রাস্তায় অনেক গাছ কাটা পড়ে, অন্য দিকে সরকার এ সকল গাছ সংরক্ষণে কোন বিশেষ উদ্যোগ নেয়নি। তিনি আরো বলেন- বরেন্দ্র অঞ্চলের তাল, খেজুর এবং বড় বড় বৃক্ষ গুলো রক্ষায় আইন বিধি নীতিমালা তৈরি ও প্রয়োগ জরুরি হয়ে পড়েছে। এগুলো সুরক্ষা না করলে আগামীতে এই অঞ্চল আরো পরিবেশ ভারসাম্যহীন হয়ে পড়বে। একইসাথে বজ্রপাত বাড়বে, খরা বাড়বে, বৃষ্টিপাত আরো কমবে।

 


ad728

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ad728
ad728
ফেসবুকে আমরা...
নামাজের সময়সূচী
জাতীয় সঙ্গীত
©সকল কিছুর স্বত্বাধিকারঃ আলোর পথ | আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ
সকল কারিগরী সহযোগিতায় অনুপম